সিলেট ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২০
.মুজিবুর রহমান ডালিম
বিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ চিন্তায় চেতনায় এক মহৎ ব্যক্তি। ভালবাসা ও মানবতার সুন্দর একটি দৃষ্টান্ত তিনি। তিনি মানবিক গুনে সম্ভৃদ্ধ একজন খ্রীষ্টিয় ধর্মীয় নেতা, সিলেট বিভাগের কাথলিক খ্রীষ্টানদের প্রধান। সিলেট বিভাগের হতদরিদ্র মানুষের এক আশারস্থল। এই বিভাগের বিভিন্ন কর্ম এলাকাতে সমাজের অধিকার বঞ্চিত মানুষদের মধ্যে নিরবে শিক্ষা ও বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মানব সেবায় ব্রতনিয়ে হতদরিদ্র সকলধর্মের মানুষেরপাশে তিনি বিভিন্ন সময়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশপের একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এসে তার চিন্তা চেতনায় পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা। বাইবেলের মঙ্গলবাণীর শিক্ষা তাকে কর্মক্ষেত্রে অনুপ্রাণিতও শক্তি দান করে। বিশপ বলেন এটা হলো খ্রীষ্ট বিশ্বাস অনুসারে শেষ বিচারের (পুরস্কার ও শাস্তির) মানদন্ড। যারা বেহেশ্ত লাভ করবে তাদের প্রতি শেষদিনে বিচারক বলবেন: “আমি যখন ক্ষুধার্ত ছিলাম আর তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে, আমি যখন তৃষ্ণার্ত ছিলাম আর তোমরা আমাকে জল দিয়েছিলে, আশ্রয়হীন ছিলাম দিয়েছিলে আশ্রয়, ছিলাম বস্ত্রহীন, তোমরা আমাকে পোষাক পড়িয়েছিলে, আমি পীড়িত ছিলাম, তোমরা আমার যত্ন নিয়েছিলে, ছিলাম কারারুদ্ধ আর তোমরা আমাতে দেখতে এসেছিলে।” (মথি ২৫: ৩৫-৩৬)। তখন তারা অবাক হয়ে বলবে এই কাজগুলো কখন অপনার প্রতি করেছি, তখন তিনি উত্তর দিবেন: তোমার দীন-দরিদ্র ও তুচ্ছতম ভাই-বোনদের প্রতি যা করেছ তা আমারই প্রতি করেছ। যাদেরকে দোজখে (নরকে) প্রেরণ করা হবে তারা সেদিন প্রভুকে জিজ্ঞেস করবে যে, আপনি কখন ক্ষুধার্ত ছিলেন, কখনই বা তৃষ্ণার্ত ছিলেন, ছিলেন বস্ত্রহীন, ছিলেন বিদেশী অথবা ছিলেন কারাগারে। তখন তিনি উত্তর দিবেন: “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এই তুচ্ছতম মানুষের একজনেরও জন্য তোমরা যা-কিছু করোনি, তা আমারই জন্যে করোনি” (মথি ২৫:৪৫)। তাই এই শিক্ষা অনুসারে তিনি ক্ষুর্ধার্ত, অভাবী ও দরিদ্রমানুষের প্রতিসাধ্যমত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করেন, শিক্ষা দানের জন্য স্কুল পরিচালনা করেনও বিভিন্ন সময়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। বস্ত্রহীনও শীতার্ত মানুষকে বস্ত্রদান করেন। করোণা ভাইরাসের সময়েও তিনি অনেক দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেছেন। মানবতাবাদী মহান মাদার তেরেজার যীশু খ্রীষ্টের এই শিক্ষায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এবং এই দীন-দরিদ্রদের ভ্রাতৃপ্রেমে, নিস্বার্থ ও সার্বজননীভাবে তাদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। শুধু তাই নয় মঙ্গল সমাচারের শিক্ষা অনুসারে হত-দরিদ্র অসুস্থদের সেবা দিতে ভ্রাম্যমান ক্লিনিকের ব্যবস্থা করেছেন। বিশপ বিজয় এন ডি’ক্রজ বলেন এই কাজগুলো যারা করবে সে যে ধর্মেরই হোক শেষ বিচারে সে স্বর্গসুখ লাভ (বেহেশ্ত)করবে। এমন কি দৃশ্যতভাবে ঈশ্বরে যাদের বিশ্বাস নেই অথবা যারা বেশী নিয়মিতভাবে ধর্ম পালন করে না কিন্তুতারা যদি বিবেক অনুসারে জীবন যাপন করে ও নি:স্বার্থভাবেএই ভালো কাজ গুলো করে খ্রীষ্ট ধর্মমতে তারাও ঈশ্বরের করুণা থেকে বঞ্চিত হবে না। তিনি আরও বলেন বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ১৪% মানুষ নাস্তিক রয়েছেন। এর জন্য বিভিন্ন ধর্মের সংকীর্ন মনোভাব, ধর্মীয় আদর্শ বাস্তবায়নের অভাব ও উদারতার অভাবই দায়ী। অতিরিক্ত চাপাচাপি, ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা, ধর্মনিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়িই নাস্তিকতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। ঈশ্বর যেহেতু সবারসৃষ্টিকর্র্তা ও সবাইকে তিনি ভালবাসেন এবং সবার পরিত্রাণ তিনি চান সেজন্য তাঁর এই মুক্তি পরিকল্পনা থেকে কেউই বঞ্চিত নয়। মাদার তেরেজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন: তিনি প্রথম জীবনে একজন শিক্ষিকা ছিলেন। দীন-দরিদ্র মানুষের দু:খ কষ্ট দেখে তাঁর প্রাণ কেঁদেছে তাই তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে হয়ে উঠেছিলেন মানবতাবদীর একজন পরম শিক্ষক। তিনি তার কর্ম অথার্ৎ মানব সেবার মধ্য দিয়েই মানব জাতির হৃদয়ে অমর হয়ে রয়েছেন এবং অনাদিকাল থাকবেন আমাদের সকলের শিক্ষক হিসেবে। মাদার তেরেজা আমাদের সকলের জননী হিসেবে সমগ্র মানবজাতিকে মমতার চাদরে জড়িয়ে রেখেছেন। অবহেলিত ও দীন-দরিদ্রদের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর দ্বারা স্থাপিত মিশনারীজ অফ চ্যারিটি সংঘের সিস্টারগণ হত-দরিদ্রমানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারা তাদের কাজের মাধ্যমে “মানুষ মানুষের জন্য”এই ধ্রুব সত্যকে যেন মূর্ত করে তুলেছেন। খ্রীষ্টধর্মের মূলমন্ত্র অনুসারে মাদার তেরেজা মিশনারিজ অফ চ্যারেটি সংঘটি অবহেলিত ও হত-দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য, বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই ধর্ম সংঘটি যারা পরিচালনা ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণের অধিকারী, সৎ, পবিত্র, ন্যায়বান ও সাধাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্থ। তারা যেন এ জগতের ভোগ ও বিলাসের উর্ধ্বে, তাদের সর্বস্বত্যাগ করে মানবতার কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিশপ বলেন, আমাদের ফাদার, সিষ্টার ও ব্রাদারগণ মানবতা ও মানুষের সেবক-সেবিকা হিসেবে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের এই সেবামূলকপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা সমাজের হতদরিদ্র বিধবা, যুবতী নারীদেরবিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তাদেরকে স্বাবলম্ভী করে যাচ্ছেন। যাতে তারা তাদের জীবনের দরিদ্রতাকে জয় করতে পারে। মানসিক ভাবে যারা ভেঙ্গে পড়েছেন তাদেরকে আলোর পথ দেখাতে মাদার তেরেজার আদর্শে এই সংঘ কাজ করে যাচ্ছে। ভ্রুণ হত্যা বিষয়ে বিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ বলেনঃ মানুষ হত্যার মতোই গর্ভপাত জগণ্যতম পাপ কাজ। গর্ভপাত মানেই মানুষ হত্যা। এ জগণ্যতম কাজ থেকে মানব সন্তানদের বিরত থাকতে আহবান জানান তিনি। একজন শিশু বা মানব সন্তান অবহেলার নয়। কারণ প্রতিটি মানুষই ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট। তাই প্রতিটি মানব সন্তানের প্রতি যত্নশীল হয়ে তাদেরকে সেবার মাধ্যমে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেতুলাই হলোসৃষ্টি কর্তার প্রভিপ্রায়। মাদার তেরেজার প্রতিষ্ঠিত মিশনারীজ অব চ্যারিটির “শিশু সদনগুলো” এই অবহেলিত ও পরিত্যক্ত মানব শিশুদের সেবায় নিরবে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা ও খুলনায় প্রতিষ্ঠিত এই শিশু সদন যেন শত শত শিশুদের জীবন রক্ষার আপনঘর। আমাদের এই সেবাগুলো কোন ধর্মের বিচারে হয় না। “মানবতাই পরম ধর্ম” বা মানবতার সেবার জন্য এই সেবা দান অব্যাহত আছে। বিশপ জানান দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শিশু সদনের শিশুদের দত্তক দেওয়া হয়। যে শিশু যে ধর্মের, সেই শিশুকে সেই ধর্মের ব্যক্তিদের কাছেই দত্তক দেওয়া হয়। পথ শিশু বিষয়ে তিনি বলেন: কোন মানব সন্তান পথে থাকবে সেটা ভাবতেও অবাক লাগে! শিশুদের স্থান হলো পিতা-মাতা সাথে গৃহ। পথ শিশুদের এই অমানবিক অবস্থার বিষয়ে বিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন এটাসভ্য সমাজের জন্য এবং রাষ্ট্রের জন্যঅত্যন্ত দু:খজনক ও অসম্মানজনক। এটা আমাদের চরম ব্যর্থতা। এই শিশুদের মৌলিক অধিকারগুলো অন্যান্য শিশুর মত নিশ্চিত করা হল অত্যন্ত মানবিক ও ধর্মীয় কাজ। তাই পথ শিশুদের নিয়েও আমাদের কিছু কর্মকান্ড রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের খাবার, চিকিৎসা, সাধারন ও ক্সনতিক শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। তারাও মানবিক সুযোগ-সুবিধা পেলে সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারবে। বিশপ বলেন যে, আমাদের দেশে ধর্ম ও সুন্দর বিশ্বাস আছে কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসের চর্চ্চা অনেক কম। সত্যিকার ধর্ম আমাদেরকে আরও সুন্দর, পবিত্র ও উদার হৃদয়ের মানুষ করে তুলে। আমাদেরকে গড়ে তুলে নীতি ও মূল্যবোধ সম্পন্ন। সেবাদান আমাদেরকে করে আরও মানবিক, প্রতিবেশী বিশেষ করে দীন দরিদ্রদের প্রতি ভালবাসাপূর্ণ সেবা কাজে করে উদ্ভুদ্ধ। ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা সুন্দর, ন্যায়, সৎ ও পবিত্র জীবন যাপন থেকে বিচ্ছন্ন হতে পারে না। ধর্ম আমাদেরকে অন্যকে ভালবাসতে ও দীন-দরিদ্রদের সেবা করতে উৎসাহিত করে। অসত্য ও অন্যায়েরবিরূদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আমাদের সাহস ও শাক্তি দান করে। তাই ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত হোক মানবিকতা এবং সুন্দর নীতিবোধ ও সার্বজনীন মূল্যবোধ তখন ধর্ম ও আমাদের জীবন উজ্জ্বল ও শাক্তিশালী হয়ে উঠবে। তখনই মানব জীবন সুন্দর, সার্থক, শান্তি ও আনন্দপূর্ণ হবে। চিরতরে দূর হোক হিংসা-বিদ্ধেষ, লোভ-লালসা, প্রতারণা, শোষণ-শাসন ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ। সকল মানুষ সুখী হোক, স্রষ্টার আর্শীবাদ ও মানুষের ভালবাসায় প্রতিটি জীবন হোক পূর্ণ ও সার্থক। এমন প্রত্যাশা করে দৈনিক সিলেটেরদিনরাত সম্পাদক মুজিবির রহমান ডালিমের সাথে তার বাসভবনে খোলামেলা কথা বলেন। ধন্যবাদ জানান দৈনিক সিলেটের দিনরাত পরিবারেরর সকলকে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ- মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান (ডালিম)
মোবাঃ- 01712-174796
বার্তা সম্পাদকঃ- জাকারিয়া হোসেন জোসেফ
মোবাঃ- 01744-420000
ইমেইলঃ- dailysylheterdinrat24@gmail.com
২২৯ এক্সেল টাওয়ার ২য় তলা সুবিদ বাজার, সিলেট।
Design and developed by RJP IT