সিলেট ২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২০
তিনি ছিলেন আমাদের করোনা বিরোধী লড়াইয়ের মুখ।
কাগজে-কলমে আইনত নেতৃত্ব ছিল তার হাতে। অথচ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে তাকে চলে যেতে হলো। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, তাকে সম্মানজনক প্রস্থানের সুযোগ দেয়া হয়েছে। যার প্রাপ্য তিনি ছিলেন না। বরখাস্ত আর বিচার এর বাইরে কোনো অনুকম্পাই তাকে দেখানো উচিত নয়।
স্বাস্থ্যে দুর্নীতির ভূত অবশ্য নতুন কিছু নয়। সিন্ডিকেট, সিন্ডিকেট, সিন্ডিকেট-এই আওয়াজ দীর্ঘ দিনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য বাধ্যতামূলক পদত্যাগকারী মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ ছিলেন সেই সিস্টেমেরই অংশ।
বলা চলে, অন্যতম কর্তাব্যক্তি। চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে এতো কথা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু করোনা মহামারি তাকে নিয়ে আসে সামনে। দুনিয়ার বাঘা বাঘা রাষ্ট্রনায়করা হিমশিম খাচ্ছেন এ ভাইরাস মোকাবিলায়। বারবার বলছেন, তারা অসহায়। কত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চেয়ার নিয়েই না টানাটানি করছে এ ভাইরাস। মন্ত্রী জাহিদ মালেক, মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ আর তার সঙ্গীরা অবশ্য বরাবরই ব্যতিক্রম। শুরু থেকেই তারা যেন বিশ্বজয়ী কমান্ডার। আমরা প্রস্তুত এ কথা প্রতিদিনই শোনা যেতো তাদের মুখে। করোনা আঘাত হানতেই অবশ্য বুঝা যায় প্রস্তুতির কী হাল! চিকিৎসকদের সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে তো রীতিমতো কেলেঙ্কারিই হয়ে গেলো! মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল শুরু থেকেই। নিম্ন মানের মাস্ক সরবরাহের বিষয়টি ধরাও পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিকিৎসকরা যেন কোন অভিযোগ না জানাতে পারেন তা নিয়ে কী তৎপরই না ছিলেন আজাদ সাহেব।
তীব্র সমালোচনার মুখেও আবুল কালাম আজাদ ছিলেন অনঢ়। বারবার একটি নীতিই অনুসরণ করে গেছেন তিনি-ডোন্ট কেয়ার। একবার তিনি ধারণা দেন, গরমের কারণে করোনা আমাদের দেশে সেভাবে আসবে না। আবার বলেন, ২-৩ বছর থাকবে। স্বাস্থ্যের নীতিনির্ধারকরা যে এখনো সঠিক পথে হাঁটছেন না সে আলোচনা আলাদা। কিন্তু রিজেন্ট ও জেকেজি কেলেঙ্কারি পুরো চিত্রই খোলাসা করে দেয়। কিসের বিনিময়ে অখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠান করোনা টেস্টের দায়িত্ব পেলো তাও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা স্বাস্থ্যের উর্ধ্বতনদের অনেক অস্বাস্থ্যকর বিষয়েরই তথ্য দিয়েছেন। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে মহাপরিচালক অবশ্য দায়িত্ব এড়াতে চেয়েছেন। তার দাবি, তখনকার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশেই এ চুক্তি হয়। এ ব্যাপারে শোকজের মুখোমুখিও হতে হয় তাকে। সম্ভবত, হাজারো অভিযোগ নয়, এ বিষয়টিই তার ভাগ্য বিপর্যয়ে নিয়ামক ভূমিকা রাখে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেঙে পড়ার এক নিদারুণ বাস্তবতায় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পদত্যাগেই জনাব আজাদের বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন অভিযোগের মীমাংসা হয় না। তেমনি সব পাপ তার একার কাঁধে দেয়ারও মানে নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শুরু থেকেই কোন অভিযোগ এলেই বলে গেছেন, তাকে জানানো হয়নি অথবা তিনি জানেন না। যদিও মন্ত্রী হিসেবে তার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। পুরো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েই পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রয়োজন শুদ্ধি অভিযান। ভেঙে দেয়া দরকার সিন্ডিকেট। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করা উচিত দোষীদের। বড় বড় চেয়ার নয়, কাঠগড়াই হওয়া উচিত অপরাধীদের স্থান।
স্বাস্থ্য আর শিক্ষা একটি জাতীর সমৃদ্ধির প্রধান নিদর্শন। সে চিকিৎসায় যারা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার পাহাড় তৈরি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি দ্রুত গড়ে তোলা উচিত একটি সঠিক ব্যবস্থাপনা। সময় হয়তো এরই মধ্যে ফুরিয়ে গেছে। তবুও জীবনের চেয়ে বেশি দামি তো কিছুই নয়। প্রচেষ্টা এখনই জরুরি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ- মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান (ডালিম)
মোবাঃ- 01712-174796
বার্তা সম্পাদকঃ- জাকারিয়া হোসেন জোসেফ
মোবাঃ- 01744-420000
ইমেইলঃ- dailysylheterdinrat24@gmail.com
২২৯ এক্সেল টাওয়ার ২য় তলা সুবিদ বাজার, সিলেট।
Design and developed by RJP IT