উদ্বোধনের পর থেকেই তালাবদ্ধ আইসিইউ

প্রকাশিত: ৩:৫৯ অপরাহ্ণ, মে ২৪, ২০২৫

উদ্বোধনের পর থেকেই তালাবদ্ধ আইসিইউ

হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলার মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার প্রধান ভরসা সদর হাসপাতাল। চিকিৎসকসহ নানা সংকটের মধ্যেই এখানে সেবা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনাসহ গুরুতর রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিলেটে। এদিকে জনবল না থাকায় স্থাপনের পর থেকেই সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে বন্ধ আছে আইসিইউ সেবা। দুই বছর আগে হাসপাতালের আটতলার আইসিইউ স্থাপনের দিন থেকেই তালাবদ্ধ রয়েছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা সিলেটে গিয়ে চিকিৎসা নেন, কিন্তু দরিদ্র রোগীরা টাকার অভাবে এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে ৬৭ জন ডাক্তাদের পদ থাকলেও আছেন ৩২ জন, পদ খালি ৩৫টি। হাসপাতালে সর্বমোট ৪৬৩ জনের অনুমোদিত পদ থাকলেও আছেন ২০০ জন, খালি ২৬৩টি। অর্থাৎ ৫৬.৮ ভাগ পদই খালি।
জানা যায়, কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের অধীনে জেলায় সরকারি হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ২১ মার্চ প্রয়োজনীয় শয্যা, সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি বুঝে পেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু লোকবলের অভাবে এটি চালু করা যাচ্ছে না। আইসিইউ সেবা সচল রাখা গেলে বহু মানুষের জীবন রক্ষা হতো। দুঃখের বিষয়, উর্ধ্বতনদের বার বার জানিয়েও এটা সচল করা যাচ্ছে না। এতে একদিকে রোগীর ভোগান্তি বাড়ছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, নতুন জনবল চেয়ে হাসপাতালগুলো চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের দেয়া তথ্যমতে, হাসপাতালে ৬৭ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৩২ জন। বাকি অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৩৫ ডাক্তারের পদ খালি। হাসপাতালে একজন করে সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ডেন্টাল), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি এন্ড অবস্), সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেস্থিশিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অথোর্পেডিক্স), আবাসিক ফিজিশিয়ান, ৩ জন এ্যানেস্থিশিয়া, ৯ জন সহকারী সার্জন, ৭ জন মেডিকেল অফিসার এবং ১ জন করে প্যাথলজিস্ট, রেজিওলজিস্ট, মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক) ও নার্সিং সুপারভাইজার পদ শূন্য রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১০ জনের মধ্যে আছেন ৫ জন, শূন্য ৫টি পদ, ২৬১ জন নার্সের পদ থাকলেও আছেন ১৩৯ জন, পদ শূন্য ১২২টি। অন্যান্য কর্মচারী ১২২ জনের মধ্যে আছেন ২৩ জন, পদ শূন্য ৯৯টি।
রোগীর তুলনায় নার্স কম থাকায় সেবা গ্রহিতাদের শতভাগ সন্তুষ্ট করা যায় না উল্লেখ করে গাইনী ওয়ার্ডের নার্স সোনালী দাস বললেন, লোকবল বেশি থাকলে আমরা আরও ভালো সেবা দিতে পারতাম।  রাতে এক—দুই জন নার্স কর্মরত থাকেন, কিন্তু রোগী থাকেন ৪৫—৪৬ জন, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে খুবই কষ্ট হয়।
তিনি বলেন, একজন সুপারভাইজার ও ১৪ জন নার্স কর্মরত আছেন। মিডওয়াইফারী পদ আছে ৬টি, কিন্তু এখানে সকল পদই শূন্য। নার্স আরও অন্তত ২৫—৩০ জন হলে ভালো হবে।
জেলা নাগরিক প্লাটফর্মের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আইসিইউ ইউনিট তৈরি হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় জনবলের কারণে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট দুইবছরেও চালু হয়নি। এতে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়াও একদিকে রোগীর ভোগান্তি বাড়ছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবায় প্রভাব পড়ছে। সামর্থ্যবানরা সিলেটে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারলেও আর্থিক অসুবিধা এবং যাতায়াত দুভোর্গে পড়ছেন বেশিরভাগ মানুষ। আমরা দ্রুততম সময়ে আইসিইউ সেবা চালু করার ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি, নইলে সরকারের অর্থ অপচয়ের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এটি।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে দুই বছর আগে ১০ শয্যার আইসিইউ স্থাপন হলেও জনবলের কারণে এখনও চালু করা যায়নি, হাসপাতালের আটতলার আইসিইউ কক্ষের দরজা স্থাপনের দিন থেকেই তালাবদ্ধ জানিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ১০ বেডের আইসিইউ চালু রাখতে সাতজন মেডিকেল অফিসার ও তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন। এই জনবল পাওয়া যায়নি, জনবল পেলেই আইসিইউ চালু হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শেখ ছাইদুল হক বলেন, আইসিইউ সচল করতে নতুন প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। তবে সেটি সময়সাপেক্ষ। নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত আইসিইউগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Live TV