চলিতে চরণ চলেনা.. বাবার কথা লিখেছেন হাদী

প্রকাশিত: ৩:৫৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২০

চলিতে চরণ চলেনা.. বাবার কথা লিখেছেন হাদী

 

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে তখনও সূর্য অস্ত যেতনা। ব্রিটিশ রাজত্বের সে দাপুটে সময়ে হেমন্তের এক স্বর্ণালী ভোরে তিনি চাল্লাইন গ্রামে ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব আর কৈশোরের দুরন্ত সময়গুলো কাটিয়েছেন তিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে, যৌবনের সোনালী সময়গুলো কেটেছে পাকিস্তানী শাসনে। জীবনের পড়ন্ত বেলায় তিনি আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ দেখেছেন খুব কাছে থেকে, দেখেছেন ৪৭’র দেশ বিভাজন, দেখেছেন বাঙালির মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। অর্থাৎ ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ-এ তিন রাজত্বের অভিজ্ঞতায় পোক্ত যে কয়েকজন ব্যক্তি আছেন, তাদের মধ্যে তিনি একজন। চাল্লাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠশালা শেষ করে তিনি ভর্তি হন দারুল হাদিস মদিনাতুল উলুম খরিলহাট মাদরাসায়। এরপর সেন্ট্রাল জৈন্তা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন এ বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। পরবর্তীতে তিনি গাছবাড়ী জামিউল উলুম কামিল মাদরাসায় ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সাথে আলীম পাস করেন। ফাজিল শ্রেনীতে ভর্তির পর তার অধ্যয়নে ছন্দপতন ঘটে এবং একাডেমিক শিক্ষার ইতি ঘটে। পরবর্তিতে তিনি পারিবারিক ব্যবসা ও গার্হস্থ কাজে মনোনিবেশ করেন। বিয়ে করেছেন, পেয়েছেন সন্তান-সন্ততি। সন্তানদের মানুষ করতে সাধ্যের সর্বোত্তম চেষ্টা করেছেন তিনি। তার সে চেষ্টাও বিফলে যায়নি।
তিনি হাজী মৌলভী মুসলিম আলী। আমার জন্মদাতা পরম সম্মানিত বাবা। প্রায় ৯০ বছরের যাপিত জীবনে তিনি আজ অনেকটাই ক্লান্ত। বার্ধ্যকের নানা রোগ তাকে কাবু করেছে। ’চলিতে চরণ চলেনা, দিনে দিনে অবশ হই’ অবস্থা তাঁর । মাছশিকারের নেশায় যে মানুষটি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন হাওর-বাওর-নদীতে, চৈত্র্যের কানফাটা বজ্রের মধ্যেও অসীম সাহসে ’উজাই’ মেরেছেন, গহীন অরণ্যে নিকষ কালো অন্ধকারে অসীম সাহসে শিকার করেছেন বন্যপ্রাণী, হুলের ভয়কে জয় করে সংগ্রহ করেছেন মৌ-প্রকৃতির নিয়মে বার্ধ্যকের জরায় সে মানুষটির ’কথা বলতে ভুল পড়ে যায়, মধ্যে মধ্যে আটক হই’ অবস্থা। তাঁর দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবে পালন করেছেন অত্যন্ত নিষ্টার সাথে। পার্থিব অর্থে বিখ্যাত বলতে যা বুঝায়, মহান বলতে যা বুঝানো হয়, তিনি হয়তো সে রকম কেউ নন। হয়তো সেটি চাননিও । তবে তার ধ্যানে-জ্ঞানে-চিন্তায়-চেতনায়-মননে-কর্মে দেখেছি-পার্থিব এ জীবন নয় বরং মহান এক আল্লাহ প্রদত্ত অসীম-অনন্ত ’পরকালীন’ জীবনের বিখ্যাত ও সফল হওয়ার আন্তরিক সাধনা। জীবনের পড়ন্ত বেলায় প্রার্থনা করি-মহান আল্লাহ যেন জীবনভর চর্চিত সাধনাকে গ্রহণ করেন। সবাই বাবার জন্য দোয়া করবেন প্লিজ, প্লিজ। রাব্বির হামহু মা কামা রাব্বা ইয়া নি সাগিরা। লেখক ঃঃ আব্দুল হাই আল হাদী(সাংবাদিক ও গবেষক)

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Live TV