সিলেট ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২৫

মো: মুকাম্মেল আহমদ
গ্রীণ হাউজ এফেক্টে জলবায়ূ পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে সিলেট। যখন বৃষ্টি হয় তখন টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহন বন্যা আর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় সিলেট। আবার বৃষ্টি না হলে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। তাপদাহে জনজীবন অস্থির হয়ে উঠে। এবার এ বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে।
দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জনপথ সিলেটকে এ কারনে দুশ্চিন্তার অন্য নেই পরিবেশবাদীদের। বিশ্বের সামগ্রিক এফেক্টের সঙ্গে স্থানীয় সমস্যা মিলে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে সিলেটে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন; বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে রাস্ট্রিয় পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে, হবেও। সিলেটকে বাচাতে হলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বৃহত্তর সিলেট ভারতের মেঘালয়ের বিস্তীর্ণ পাহাড়রাজির পাদদেশের একটি জনপদ। এখানে যেমন টিলাভুমি আছে তেমনি রয়েছে হাওর ও নদীর আধিক্য। ফলে সিলেটের পরিবেশ সুরক্ষা করতে না পারলে অচিরেই জীব-বৈচিত্রও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে টিলাকাটার বিষয়টি। প্রভাবশালীরা অবাধে টিলা কাটার ফলে নগর সহ গোটা অঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। গেলো কয়েক বছরে অন্তত ২ শতাধিক টিলা নিশ্চিহৃ করে দেওয়া হয়েছে। পাথর সম্রাজ্য ভোলাগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা সহ কয়েকটি টিলা ইতিমধ্যে ধ্বংস করা ছাড়াও বিশাল আকৃতির গর্তে পরিনত করা হয়েছে।
সিলেটের তাপমাত্রাও বেড়েছে। তাপমাত্রায়ও ৬৫ বছরে রেকর্ড ভেঙেছে সিলেট। চলতি বছর আগষ্ট সেপ্টেম্বরে সিলেটে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এই রেকর্ড ১৯৫৬ সালের পর অক্টোবর মাসে সিলেটে সর্বোচ্চ রেকর্ড তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সিলেট অঞ্চলের প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আবার শীতকালে অস্বাভাবিক হারে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা কমে আসে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে। তাপমাত্রা কমার হার সবচেয়ে বেশি হয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের শ্রীমঙ্গলে।
পরিবেশবিদরা দৈনিক দিনরাতকে জানিয়েছেন- প্রকৃতিকে এই বিধ্বংসী আচরণ করছে মানুষজন বাধ্য করেছে। গাছপালা কেটে, নদনদী দখল ও দূষণ করে, পাহাড় টিলা কাটার কারণে প্রকৃতি তাঁর স্বাভাবিক নিয়মে চলতে পারছে না। ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। তাই মানবসৃষ্ট এই দূর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষজকে উদ্যোগ নিতে হবে। পৃথিবীকে মানুষের বসবাস উপযোগী করে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রকৃতিকে তাঁর আপন নিয়মে চলতে দিতে হবে। ২০২২ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ছিল সম্প্রতি স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহতম বন্যা। দুই দফার বন্যায় সিলেটে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে। বন্যায় মারা গেছেন ৭৮ জন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার। আবহাওয়াবিদদের তথ্য মতে ওই বছরের জুন মাসে সিলেটে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮১৮.৪ মিলিমিটার। কিন্তু চলতি বছর জুন মাসে সিলেটে ১৪৫৬.০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৩৭.৬২ মিলিমিটার বেশি। উজানের নেমে আসা ঢলের পাশাপাশি এই অতিবৃষ্টিও ছিল সিলেটের বন্যার কারণ।
ভুমিকম্পের প্রবণতাও বাড়ছে। সিলেটের পাশেই রয়েছে বিশ্বের ভুমিকম্পের ডেঞ্জার জোন বলে পরিচিত ডাউকি ফল্ট। ঘন ঘন ভুমিকম্পের কারনে ওই ফল্টে বড় ধরনের ভুমিকম্পের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। সম্প্রতি সময়ে শাহজাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে। বছর ২৯ মে একই দিনে সিলেটে পাঁচবার ভূমিকম্প হয়। ৩০ মে সকালেও কেঁপে ওঠে সিলেট। এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ডাউকি ফল্টের কাছাকাছি থাকা জৈন্তাপুর উপজেলায়। পরে ৭ জুন সন্ধ্যায় মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে সিলেটে আবারও দুই দফা ভূমিকম্প হয়। চলতি বছরেও সিলেট অঞ্চলে কয়েক দফা ভুমিকম্প আঘাত হেনেছে। ফলে ডেঞ্জান জোন সিলেটকে নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়ে চলেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
এ ব্যাপারে ধরিত্রী সিলেটের মুখ্য সংগঠক ও বাপা’র সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুল করিম কিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- সিলেট অঞ্চলে যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন বৃষ্টি হয় না। আবার হলে অতিবৃষ্টি হয়। তাপমাত্রা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করছে সিলেটে। গ্রীষ্মকালে কুয়াশা পড়ে। হাওর বিলে যখন পানিতে থৈ থৈ থাকার কথা তখন দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক শাকিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও আচার-আচরনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে ও ভবিষ্যতে এর আওতা আরও বাড়বে। অদূর ভবিষ্যতে কেবল প্রাণ প্রকৃতি নয়,জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে বদলে দিবে। যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ- মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান (ডালিম)
মোবাঃ- 01712-174796
বার্তা সম্পাদকঃ- জাকারিয়া হোসেন জোসেফ
মোবাঃ- 01744-420000
ইমেইলঃ- dailysylheterdinrat24@gmail.com
২২৯ এক্সেল টাওয়ার ২য় তলা সুবিদ বাজার, সিলেট।
Design and developed by RJP IT