দোয়ারাবাজার হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর কোটি টাকার সম্পত্তি     

প্রকাশিত: ৬:০১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২০

দোয়ারাবাজার হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর  কোটি টাকার সম্পত্তি     

 

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি :
পেশায় তিনি একজন তৃৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি। চাকরিতে যোগদানের সময় তার নামে ছিলনা কোনো সম্পত্তি। ১৯৯১ সালে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারি কাম হিসাব রক্ষক পদে যোগদান করার পর থেক আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একসময়ে পায়ে হেটে এসে অফিস করা এই অফিস সহকারির এখন একটি দুটি নয়, জেলা ও বিভাগীয় শহরে তিনটি নিজস্ব বিলাসবহুল বাসা বাড়ি রয়েছে তার। তার সমসাময়িকসহ পরের অনেকেরই অন্যত্র বদলি হলেও প্রায় ২৯ বছর ধরে একই কর্মস্থলে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। হাসপাতালের অফিস সহকারি পদে থেকেই রাতারাতি বদলে গেছে তার ভাগ্যে। সিলেট-সুনাামগঞ্জে গড়ে তুুুুলেছেন সম্পদের পাহাড়। আলাদিনের চেরাগ পাওয়া এই ব্যক্তি দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারি মোঃ হানিফ। গত ০৭ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অফিস সহকারি থেকে কোটিপতি হয়ে যাওয়া এই হানিফ-ই মূলত দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান নিয়ন্ত্রক। অনেকের কাছে তিনিই হাসপাতালের ছায়া টিএইচও। হাসপাতালের স্টাফদের বেতন ভাতার বিল তৈরি করা থেকে শুরু করে যাবতীয় আর্থিক লেনদেন তার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। কর্মস্থল দোয়ারাবাজার উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও উপজেলার বাইরে সুনামগঞ্জ ও সিলেটে বিস্তর সম্পদ তার। হাসপাতালের অফিস সহকারি পদে থেকেই জেলা শহর সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১৯/১, আ/এ, বনানী পাড়ায় দুটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। শুধু সুনামগঞ্জেই নয়। বিভাগীয় শহর সিলেটেও নিজস্ব বিলাসবহুল বাসভবন রয়েছে তার। ২০১৬ সালে সিলেট শহরের টুকের বাজারে নয়া খুররম খলায় এক কোটি টাকার বিনিময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা একটি বাসা ক্রয় করেন তিনি। বর্তমানে সুনামগঞ্জের সরকারি হাস প্রজনন কেন্দ্রের পাশে ও সিলেট শহরের প্রায় ৬ একর এবং নিজ এলাকা দোয়ারাবাজার উপজেলার আজমপুুর ও লক্ষীপুরের প্রায় ২০ একর জমির মালিক তিনি। হানিফের চালচলন দেখে মোটেও বুঝার উপায় নেই যে এতো অঢেল সম্পদের মালিক তিনি! ২০১৯ সালে সিলেটের সুবিদবাজারের খান প্যালেসে তার জ্যেষ্ঠ কন্যার ব্যয়বহুল বিয়েতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করা হয়। এর মাস ছয়েক পরেই তার একমাত্র পুত্র সন্তানকে পড়াশোনার উদ্দেশ্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে লন্ডনে পাঠিয়েছেন স্টুডেন্ট ভিসায়।হানিফের তিন সন্তানের সবাইকে পড়াশোনা করিয়েছেন ব্যয়বহুল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অভিযোগ রয়েছে, সুনামগঞ্জ ও সিলেট শহরে বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে নামে বেনামে লক্ষ লক্ষ টাকা জমা আছে তার। সিলেটে ক্রয় করা বাড়িটি আয়কর রিটার্নে জমা না দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন তিনি। সুনামগঞ্জ-সিলেটের এসব সম্পত্তি অর্জনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যাংক লোন কিংবা জিপি ফান্ড থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেননি তিনি। উপজেলা পর্যায়ের একটি সরকারি হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারী হয়েও কিভাবে এতো টাকা উপার্জন করেন তিনি তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমকর্মী জানান, হাসপাতাল এবং হানিফের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকরাও লিখতে গিয়ে পিছপা হন। হানিফের এক নিকটাত্মীয় সিনিয়র সাংবাদিক হওয়ায় হাসপাতালের যেকোনো বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হলেই তিনি ওই সিনিয়র সাংবাদিকের নাম বিক্রি করে পার পেয়ে যান।

এব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মজিদ জানান, হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় অফিস সহকারি হানিফকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। চাকরির শুরুর দিকে কিছুই ছিলনা তার। চকবাজার থেকে পায়ে হেটে এসে অফিস করতো। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে হাসপাতালে সে একটি অসাধু সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছে। হাসপাতালে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। টিএইচও থেকে শুরু করে ডাক্তার, নার্স সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করে হানিফ। হাসপাতালের কোনো অনিয়ম দুর্নীতির খবর যাতে পত্র-পত্রিকা না আসে সেদিকটাও সে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। হাসপাতালের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতিতে হানিফের যোগসাজশ রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমেই সে এখন রাতারাতি পাহাড় গড়ে তুলেছে। তার বিরুদ্ধে কথা বলার মতো কেউ নাই। টাকা দিয়ে সে উর্ধ্বতন প্রশাসন থেকে শুরু করে সাংবাদিক পর্যন্ত কিনতে পারে। দোয়ারাবাজারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বীরপ্রতীক জানান, একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি হয়েও কিভাবে এতো টাকার মালিক তা রহস্যজনক। এবিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান করার মাধ্যমে রহস্যে উন্মোচন করা উচিত।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারি মোঃ হানিফ তার উপর আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, আমি ও আমার স্ত্রী দুজনেই সরকারি চাকুরিজীবী। পারিবারিক ভাবে আমরা পূর্ব থেকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। আমার ভাই ভাতিজা প্রবাসে আছে। আমার সকল সম্পদের আয় ব্যয়ের হিসাব আছে। এবিষয়ে আমার আর কোনো বক্তব্য নেই। সিলেট-সুনামগঞ্জের বাসার আয়কর রিটার্নে জমা দেওয়া আছে।

যোগাযোগ করা হলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনিয়া সুলতানা জানান, হানিফের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এবিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট প্রেরণ করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে।

মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শামস উদ্দিন প্রতিবেদককে জানান, আমি দুইদিন ঢাকায় ছিলাম। হানিফের বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসছে কিনা আমি জানিনা। তবে অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখবো।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Live TV